পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ধাক্কা হলো- একদিন সবার মাঝে নিজেকে 'অ্যাভারেজ' হিসেবে আবিষ্কার করা, জীবনের উপন্যাসে টপারদের এলিট গল্পতেও আমি নেই, ব্যাকবেঞ্চারদের রূপকথাতেও আমি নেই। বইটা উল্টে-পাল্টে দেখেই পাশের বন্ধুটা সব মনে রাখতে পারতো, প্রেজেন্টেশনের সময় একটিবারের জন্যও ওদের কথা আটকে যেতো না, ইন্টারভিউতে কি চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়ে ফেলতো ওরা, কেউ অসাধারণ ডিবেটার, কেউ দুরন্ত ক্রিকেটার, কেউ জিনিয়াস লেভেলের আর্টিস্ট, কেউ অলরাউন্ডার।
আমাকে দিয়ে কিছুই হলো না, গালভরা ইংরেজিতে মিথ্যে সান্ত্বনা নিয়ে বললাম, Jack of all trades, Master of none!!
খুব যত্ন করে লুকিয়ে রাখতাম অনুভূতিটা, তবু এত কিছুর মাঝে নিজেকে প্রতিনিয়ত বেমানান মনে হতোই...
ঝুম বৃষ্টির সময়টাতে আকাশের কোণে চুপচাপ বসে থাকা এক টুকরো ধূসর পরদেশী মেঘের মতো, যে আর দশটা মেঘের মতোই বৃষ্টি হতে চেয়েছিলো, কিন্তু দশজনের মিছিলে সে সবসময়ই ছিলো এগারো নম্বর।
সবাই বলে, চেষ্টায় সব হয়, বিশ্বকাপে আন্ডারডগ টিমটাও জিতে যায়, স্কুল পালিয়ে কেউ রবীন্দ্রনাথ হয়ে যায়, জুকারবার্গের ড্রপ আউটের মোটিভেশনাল স্টোরি ভেসে বেড়ায় বাতাসে, সে বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়েও অসাধারণ কেউ হতে না পারলে আরো বেশি সাফোকেটিং লাগে...!
অ্যাভারেজ মানুষটা একদম যে নিঃশেষ হয়ে যায় তাও কিন্তু না, সে শূন্যও নয়, একশোও নয়, সে এমন এক সংখ্যা যার জন্য কেউ উচ্ছ্বসিত হয় না, যাকে পৃথিবী প্রতিনিয়ত একশো হওয়ার স্বপ্ন দেখায়, কিন্তু মিডিওক্রিটির ভার কাঁধে নিয়ে সে আর ছুটতে পারে না।
মাঝে মাঝে মনে হয়, একদম শূন্য হয়ে বাতিলের খাতায় চলে গেলে হয়তো জীবন নিয়ে কোনো রকম উচ্চাশা থাকতো না। কিন্তু পাহাড়ের চূড়া আর মাটির ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড়িয়ে কখনো উপরে আর কখনো নিচের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থেকে জীবন কিংবা ভাগ্য বদলে যাওয়ার মিরাকেল আশা করতে থাকাই কারো কারো নিয়তি!
শেষমেশ এখন নিজেকে নিজেই এটাই বুঝাই যে-
"জীবনের সাথে যুদ্ধ করে হয়তো আরেকটু ভালো থাকা যায়, কিন্তু নিয়তির সাথে কখনো যুদ্ধ হয় না"
আহ জীবন🥀