শুলে চড়ানো পদ্ধতিটি কী? কীভাবে এই শাস্তির উৎপত্তি হয়?

শুলে চড়ানো পদ্ধতিটি কী? কীভাবে এই শাস্তির উৎপত্তি হয়?

কোনো কোনো ব্যথাকে বিশেষিত করতে আমরা বলি_ ‘শূলের মতো ব্যথা’। বই-পত্তর পড়তে গিয়ে ‘শূলে চড়ানো’ শব্দটি পড়েছেন নিশ্চয়ই? ‘শূলে চড়ানো’ বা ‘শূলবিদ্ধ করা’ একটি প্রাচীন শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পদ্ধতি। নিঃসন্দেহে এটি ছিল ভয়াবহ ও বর্বরোচিত শাস্তি। প্রথম শূলে চড়ানোর ইতিহাস পাওয়া যায় প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে। প্রস্তর খোদাই থেকে দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১৭৭২ খিস্টপূর্বে ব্যাবিলনের রাজা হাম্মুরাবি একজন নারীকে তার পুরুষ সঙ্গীর অন্য নারীর সাথে সখ্যতায় বাঁধা দেয়ায় তাকে শূলে চড়ায়।

মিশরে খিস্টপূর্ব ৭৫০-৬৮১ সময়ে শূলে চড়ানোর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।মিশরের রাজা দ্বিতীয় সার্জন তার রাজধানীতে আক্রমণ ও বিদ্রোহ করা দ্বায়ে ১৪ জন রাজদ্রোহীকে জনসমক্ষে শূলে চড়ান। পারস্যের রাজা প্রথম দারিউস(৫৫০-৪৮৬ খিস্টপূর্বে) ব্যাবিলন জয় করার পর প্রায় ৩ হাজার ব্যাবিলনবাসীকে শূলে চড়িয়েছিলেন।

একটি সুচালো দণ্ড বা খুঁটিকে দেহের বিভিন্ন ছিদ্রপথে বিশেষ করে পায়ুপথে প্রবেশ করানো হতো। তারপর খুঁটিটিকে মাটিতে গেঁড়ে দেওয়া হতো। একসময় সুচালো অংশটি অপরাধীর শরীর ভেদ করে বুক অথবা ঘাড় দিয়ে বের হয়ে যেত। অপরাধী ব্যক্তিটি এভাবে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। অনেক সময় খুঁটিটির মাথা সুচালো না করে ভোঁতা রাখা হত যাতে হৃৎপিণ্ড বা অন্যান্য প্রধান অঙ্গ বিদ্ধ হয়ে তাড়াতাড়ি মারা না যায়। এতে অপরাধী বেশি কষ্ট পেত। কেননা মারা যেতে কয়েক ঘণ্টা এমনকি একদিন সময়ও লাগত। শূলে চড়ানোর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি কুখ্যাত ছিল প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ওয়ালেশিয়া রাজ্যের যুবরাজ তৃতীয় ভ্লাদ যাকে বলা হয় ড্রাকুলা। তৎকালীন তুরস্কে এ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। তুর্কিদের হাতে একবার আটক হওয়ার সময় তৃতীয় ভ্লাদ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এ পদ্ধতিটি শিখে নেয়। ড্রাকুলা যুদ্ধবন্দি ও রাজদ্রোহীদের শূলে চড়াত সাধারণ প্রজাদের সম্মুখে যাতে তারা ড্রাকুলাকে ভয় পায়। তার শত্রুদের জন্যও এটা ছিল তার ভয়াবহতার ইঙ্গিত। তবে ড্রাকুলার শূলে চড়ানোর পদ্ধতি ছিল ভিন্নতর। পেট অথবা পিঠের মধ্য দিয়ে সুচালো কোনো দণ্ড ঢুকিয়ে দিয়ে তা মাটিতে গেঁড়ে দেওয়া হতো। এভাবে একসঙ্গে অনেক মানুষকে শূলে চড়িয়েছেন ড্রাকুলা। কুখ্যাত ড্রাকুলাকে নিয়ে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। কিছু কিছু সিনেমায় শূলে চড়ানোকে ভ্যাম্পায়ারদের হত্যা করার পদ্ধতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আফ্রিকান উপজাতি জুলুদের মধ্যে শূলে চড়ানো প্রচলিত ছিল। জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ায়ও একসময় এ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল।

পাক-ভারত উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালা প্রদেশে নিকট অতীতে শূলে চড়ানোর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কোন মন্তব্য থাকলে নির্ধিদায় লিখতে পারো

নবীনতর পূর্বতন